বারিধারা কাঁচাবাজার যেন আলাদিনের চেরাগ!
রাজধানীর বারিধারা জে ব্লক নতুন বাজারের রাজউক প্রস্তাবিত কাঁচাবাজারে পজিশন বিক্রির মাধ্যমে অন্তত ১০ কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। প্লট বরাদ্দ নিয়ে পজিশন বিক্রি করলেও রহস্যজনক কারণে পদক্ষেপ নিচ্ছেন না রাজউক কর্তৃপক্ষ।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগমুহূর্তে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বারিধারা নতুন বাজার দোকান মালিক সমবায় সমিতির নেতারা। তারা বেশ কয়েকটি দোকানের পজিশন বিক্রির চেষ্টা করছেন। রাজউক প্রস্তাবিত এই ‘কাঁচাবাজার’ যেন আলাদিনের চেরাগ। চলছে মহাবাণিজ্য! গুরুত্বভেদে একেকটি দোকানের পজিশন মোটা অঙ্কের টাকায় বিক্রি করে দিচ্ছেন সমিতির নেতারা। অবৈধভাবে পজিশন-দোকান বিক্রি এবং চাঁদাবাজির কারণে সেখানকার ব্যবসায়ীরা ক্ষোভে ফুঁসছেন। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশ করে ওই সিন্ডিকেট কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন বলেও অভিযোগ তুলেছেন ব্যবসায়ীরা।
একটি গণমাধ্যমের প্রকাশিত সংবাদের তথ্যমতে, বারিধারা জে ব্লকের ৫নং প্লটের প্রায় ২৬কাঠা সম্পত্তি ১৯৬২সালে অধিগ্রহণ করা হয়।
দীর্ঘদিন ধরে সেখানে ছিল অবৈধ দখলদার। ১৯৯৭ সালে ঢাকা-৫ আসনের তৎকালীন সাংসদ ওই জায়গাটিতে কাঁচাবাজার রাখার উদ্যোগ নেন। ওয়ান ইলেভেনের সময় এবং রাজনৈতিক অস্থির পরিস্থিতির মধ্যেই রাজউক থেকে জায়গাটির সাময়িক বরাদ্দ পায় বারিধারা দোকান মালিক সমবায় সমিতি লিঃ। এরপর ওই বরাদ্দ বাতিল হলে সেখানে একটি মার্কেট নির্মাণ করে তিনটি সংগঠনের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সমবন্টন করে বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। হঠাতই ২০১৮ সালে ওই জায়গাটি বারিধারা দোকান মালিক সমবায় সমিতিকে এককভাবে সাময়িক বরাদ্দ দেয়া হয়। বিষয়টি জানার পর অন্য দুই সমিতির ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টদের ক্ষোভ-অসন্তোষের মুখে ওই সমিতিকে দেয়া ডিও লেটার স্থগিত করেন স্থানীয় সাংসদ। তিনি বারিধারা ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিঃ, বারিধারা নতুন বাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মী ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সমন্বয় করে ওই জায়গা পুনরায় বরাদ্দ দেয়ার জন্য রাজউক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেন। সংসদ সদস্য বারিধারা জে ব্লকের ১০১৮ ও ১০১৯ দাগের ওই জায়গাটির বরাদ্দপত্র সমন্বয়ের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রীর কাছেও চিঠি দেন।
"দোকান আর পজিশন বিক্রি করলেও নিরব রাজউক।
দশ কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ।"
ওই পত্রে সংসদ সদস্য উল্লেখ করেন, ২০১৮ সালে ১১৯ জনকে ক্ষতিগ্রস্ত উল্লেখ করে জায়গাটি বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্ত সেই তালিকায় অনেক ব্যবসায়ীকেই রাখা হয়নি। নতুন বাজার ব্যবসায়ী সমিতি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা, স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুঃস্থ ও অসহায় কর্মীরাও তালিকায় নেই। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী সমিতি ও আওয়ামী লীগের দুঃস্থ কর্মীদের নাম অন্তর্ভূক্ত করে বরাদ্দপত্র সমন্বয় এবং সংশোধনের জন্য কয়েকদফা রাজউক চেয়ারম্যান বরাবর ডিও লেটার প্রদান করা হয়। এরপরও বিষয়টির সমাধান হয়নি। দ্রুত সমাধানকল্পে প্রতিমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন সাংসদ। জটিলতা নিরসন না হওয়ায় সেখানকার স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চালন হয়েছে। চাপা ক্ষোভ থেকে যেকোনো সময় ব্যবসায়ীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। কাঁচাবাজারকে কেন্দ্র করে অনাকাক্সিঙ্খত কোন ঘটনা ঘটলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য দায় এড়াতে পারেন না বলে মন্তব্য করেছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী।
প্রতিবেদন ২>> বারিধারা কাঁচাবাজারে বরাদ্দে অনিয়ম, সংঘর্ষের আশঙ্কা
বারিধারা নতুন বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ খন্দকার অভিযোগ করেন, রাজউক দপ্তরে একাধিক চেয়ারম্যান এসেছেন, আবার চলেও গেছেন। কেউই সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। রাজউক কর্তৃপক্ষ রহস্যজনক কারণে নিরব রয়েছেন। একই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. সুরুজ্জামানের অভিযোগ, রাজউকের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা একটি সিন্ডকেটকে সুবিধা দিয়েছেন। বিনিময়ে অসাধু কর্মকর্তারা মোটা অঙ্কের টাকা বখরা নিয়েছেন। যাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকেই ডাবল বেনিফিসিয়ারি। তাদের অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে এরআগে বিভিন্নস্থানে প্লট নিয়েছে। তারাই আবার ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে এখানেও প্লট পেয়েছে। রাজউক তাদের ব্যাপারে কোন তদন্ত করেনি। এ ধরনের সুবিধাভোগীর ব্যাপারে আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে অভিযোগ করেছি। আশা করছি, অল্প দিনের মধ্যেই দুর্ণীতিবাজদের মুখোশ উন্মোচিত হবে।
ব্যবসায়ী সংগঠনের দুই নেতা বলেন, ওই জায়গাটি বারিধারা নতুন বাজারের তিনটি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী সংগঠনের মধ্যে সমন্বয় করে সমবন্টনের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য খুবই আন্তরিক। তিনি রাজউক চেয়ারম্যানকে একাধিকবার ডিও লেটার দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট প্রতিমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও চেয়েছেন। ব্যবসায়রা বলছেন, সার্বিক বিষয়টি স্থানীয় সাংসদকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি নিশ্চয়তা দিয়েছেন এবং বাজারের তিনটি ব্যবসায়ী সংগঠনের মধ্যে প্লট সমবন্টনের উদ্যোগ নিয়েছেন। আমরা তার উদ্যোগ বাস্তবায়নের অপেক্ষায় আছি। তাদের দাবি, ক্ষতিগ্রস্ত কাউকেই বাদ দিয়ে নয়, তিনটি সংগঠনের সমন্বয়ে যেন প্লটটি সমবন্টন হয়। কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হলে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর মধ্যে চাপা ক্ষোভের অবসান ঘটবে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কর্মকর্তাদের মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বারিধারা দোকান মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি দিন মোহাম্মদ দিলু বলেন, তার বিরুদ্ধে দোকান বিক্রি করে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ভিত্তিহীন। ২০০৭ সালে তার সংগঠনের নামে ওই জায়গা সাময়িক বরাদ্দ দেয় রাজউক। নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে বরাদ্দপত্র স্থগিত রেখে ক্ষতিগ্রস্তদের একটি তালিকা চায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। আমরা ১১৯জন ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে জায়গার পরিবর্তে বরাদ্দ চাইলে ২০১৮ সালে রাজউক থেকে ফের সাময়িক বরাদ্দ পেয়েছি। জায়গার অনকুলে রাজউকে চাহিদামতে টাকা পরিশোধও করা হয়। কর্তৃপক্ষ চুড়ান্ত বরাদ্দ দিতে বিলম্ব করলে আমরা হাইকোর্টে মামলা করি।
পুনরুত্থান/সালেম/সাকিব/এসআর
দৈনিক পুনরুত্থান / নিজস্ব প্রতিবেদক
আপনার মতামত লিখুন: