আগস্টিনের আধিপত্যে কালব সাম্রাজ্যের বাকি সদস্যদের স্বপ্ন পুড়ে ছাই
খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ভাগ্য উন্নয়নে গঠন করা (কাল্ব) একজন স্বঘোষিত অধিপতির একক আধিপত্যে সদস্যদের স্বপ্ন পুড়ে ছাই হতে চলেছে।প্রায় সাড়ে চার দশক আগে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের সমবায়ের বাতিঘর হিসেবে খ্যাত দি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লীগ অফ বাংলাদেশ লিমিটেড (কালব) আগস্টিন সিন্ডিকেটের একক আধিপত্য তৈরির ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে তার দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।পরিচালনার মুখোশধারী বেপরোয়া দুর্নীতিবাজ চক্রের গ্রাস নৈরাজ্যে বেহাল হচ্ছে এর কোটি কোটি টাকার সম্পদ।
১৯৭৯ সালের ১৪ জানুয়ারিতে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ১১টি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়নের সমন্বয়ে তদারকি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গঠিত হয় দি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লীগ অফ বাংলাদেশ লিমিটেড (কাল্ব)। যদিও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান এটি,অথচ এই সোসাইটিকে ঘিরে চলছে দুর্নীতির মহোৎসব।দুর্নীতি আর অনিয়মই যেখানে নিয়মে পরিণত হয়েছে।পরিচালনা কমিটির সবাই অবৈতনিক।অথচ সমবায় আইন লঙ্ঘন করে কমিটির এক একটি পদ বছরের পর বছর দখল করে রাখা হচ্ছে। এমনকি প্রতিষ্ঠানটির অবৈতনিক চেয়ারম্যান পদে বর্তমানে যিনি রয়েছেন,তিনি প্রায় ১১ বছর ধরে তার একক আধিপত্য ধরে রেখেছেন বলে বিভিন্ন তথ্য সূত্রে জানা যায়।
অভিযোগ উঠেছে এই সোসাইটিকে ঘিরে কোটি কোটি টাকার অপ্রতিরোধ্য দুর্নীতি আর লুটপাট চলছে।পরিচালনা কমিটির অনেকেই ইতিমধ্যে গড়েছেন কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ।সম্প্রতি সোসাইটির চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরিফিকেশনসহ পরিচালনা কমিটির কয়েকজনের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়ম দুর্নীতির তদন্ত চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে আবেদন করেছিলেন সোসাইটির একজন সদস্য।অন্য দিকে মেট্রোপলিটন খ্রিষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিমিটেডের চতুর্থ মেয়াদে সেক্রেটারির পদে থাকা ইমানুয়েল বাপ্পি মণ্ডল, চতুর্থ মেয়াদে ট্রেজারার পদে থাকা বাদল বি. সিমস্যাং, চতুর্থ মেয়াদে পরিচালক পদে থাকা কল্পনা ফলিয়া, পরিচালক ডেভিড প্রবিন রোজারিও এবং সিনিয়র ম্যানেজার (ল্যান্ড) রতন আর পেরেরার বিরুদ্ধেও অভিযোগ করা হয়েছিল সংশ্লিষ্ট দপ্তর গুলোতে। তারা সমবায় প্রতিষ্ঠানটি লুটপাট করে অঢেল অর্থ বিত্তের মালিক বনে গেছেন বলে দুদকে দাখিল করা এক আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগষ্টিন পিউরিফিকেশন সোসাইটিতে বর্তমানে অবৈধভাবে চেয়ারম্যান পদে আছেন। সমবায় আইন ২০০১ (সংশোধিত ২০১৩) এর ১৮(৮) ধারায় বলা হয়েছে ‘ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য হিসেবে একাধিক্রমে তিনটি মেয়াদ পূর্ণ করিয়াছেন এমন কোনো সদস্য উক্ত মেয়াদের অব্যবহিত পরবর্তী একটি মেয়াদের নির্বাচনে প্রার্থী হইবার যোগ্য হইবেন না।’অথচ সমবায়ের আগষ্টিন পিউরিফিকেশন দ্য মেট্রোপলিটন খ্রিষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিমিটেডে অবৈধভাবে চতুর্থ মেয়াদে চেয়ারম্যানের পদ দখল করে আছেন।এ বিষয়ে সমবায় অধিদফতরের ২০২০-২১ অর্থবছরের অডিট রিপোর্টে চতুর্থ মেয়াদে নির্বাচিত দেখানো চেয়ারম্যানসহ চারজনকে অপসারণের নির্দেশনা দেয়া হয় এবং তাদের স্বাক্ষরে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরিচালনা বন্ধ করতে বলা হয়। কিন্তু আইনের তোয়াক্কা না করে আগষ্টিন পিউরিফিকেশন চেয়ারম্যানের পদ দখল করে রেখেছেন বলে অভিযোগ।
ও রিচার্ড জেভিয়ার কল্লোল প্যারিশ। মেট্রোপলিটন খ্রিষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি: এর সদস্য অমূল্য লরেন্স পেরেরা ও রিচার্ড জেভিয়ার কল্লোল প্যারিশ এর আবেদনের প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে সমবায় মন্ত্রণালয় আগষ্টিন পিউরিফিকেশনের দুর্নীতি তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেওয়া হয় সমবায় অধিদফতরকে। স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের উপসচিব সিদ্ধার্থ শংকর কুন্ডু স্বাক্ষরিত এক পত্রে (স্মারকনং-৪৭.০০.০০০০.০৩২.০৬.০৬২.১৫.১৩৯ তারিখ-৩০/৩/২০২৩) এই আদেশ প্রদান করা হয়।অবশ্য এর আগেই সমবায় অধিদফতর ঢাকা বিভাগীয় যুগ্ম নিবন্ধককে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছিল। সমবায় অধিদফতরের উপনিবন্ধক মাফরোজা আক্তার স্বাক্ষরিত এক পত্রে (স্মারক নং- ৪৭.৬১.০০০০.০২৪.৪০.০৭০.১৮.৭৭ তারিখ-১/৩/২০২৩) এই আদেশ প্রদান করেন।
আবেদনেরপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গিয়েছে।চরম ভাবে ব্যাহত হচ্ছে সমবায়ীর মূল কার্যক্রম।বিগত আওয়ামী সরকারের শাসনামলে সময়ে বহু রাজনৈতিক নেতা স্বার্থান্বেষী মহলের ছত্রছায়ায় নানা সুবিধাও ভোগ করেছে এ প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা।গঠন পরবর্তীতে সংস্থাটি অন্যান্য ধর্মের এবং গোষ্ঠীকেও এর সদস্যপদ দেয়।কালব বিগত সাড়ে চার দশকে সদস্যদের দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে রিসোর্ট, এগ্রো প্রজেক্টসহ নানা উৎপাদনমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করে।কাল্বের রয়েছে বিশালাকার নিজস্ব কার্যালয়।কিন্তু কথিত চেয়ারম্যান আগস্টিনের স্বার্থান্বেষী থাবার কবলে পড়ে আজ প্রতিষ্ঠানটির অগ্রযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।সংস্থার নিয়ম নীতি বহির্ভূত ভাবে নিজের স্বেচ্ছাচারী সংস্থায় পরিণত করেছেন আগস্টিন।তার এমন স্বেচ্ছাচারী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে অনেকে পদত্যাগ করার মতো সিদ্ধান্ত নেয়।তারপর থেকেই দীর্ঘ সময় আঁকড়ে রাখা চেয়ারম্যান পদ থেকে আগস্টিনকে একপর্যায়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়।
আওয়ামী সরকার প্রধান দেশ ত্যাগের পর থেকে আগস্টিন আত্মগোপনে রয়েছে।বর্তমানে একটি আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চলছে কাল্ব'র কার্যক্রম।তবে দূর্নীতিবাজদের ভয়াল থাবায় লুটপাট হওয়া অর্থ কি ভাবে কাল্বের তহবিল ফেরত আসবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তার শঙ্কা কাটছে না।তদারকির দায়িত্ব নিয়ে গঠন করা (কাল্ব)এর পরিচালনা পরিষদের কর্তাব্যক্তিরা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের কলকৌশলেই নিমজ্জিত ছিলো অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য কো-অপারেটিভগুলোকে কেবল শোষণ করা হয়েছে।এভাবেই মূষ্ঠিমেয় কিছু লোকজন
খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষের ভাগ্য পুড়ে অঙ্গার করছে।অপর দিকে সারাজীবনের সঞ্চায় কোথায় রাখছেন এসব সমিতির সদস্যরা তা নিয়ে ফাঁপা ক্ষোভ কাজ করছে বলে মনে করছেন অনেকে।
দৈনিক পুনরুত্থান / নিজস্ব প্রতিবেদক
আপনার মতামত লিখুন: