৫ বছরে ভারতে রপ্তানি হয়েছে সাড়ে ৫ হাজার টন ইলিশ
দুর্গাপূজাকে ঘিরে প্রতি বছরের মতো এবারও বাংলাদেশ থেকে ইলিশ যাচ্ছে ভারতে। ইতোমধ্যে ৩ হাজার টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ৫ বছরে ভারতে ৫ হাজার ৫৯৮ টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে।
২০১৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত জাতীয় রপ্তানি নীতিতে (২০১৫-১৮) ইলিশ মাছ শর্ত সাপেক্ষে রপ্তানিযোগ্য পণ্যের তালিকায় রাখা হয়। তবে ইলিশ রপ্তানির প্রথম অনুমতি দেওয়া হয় ২০১৯ সালে। সেবার ইলিশের তিনটি চালান ভারতে পাঠানো হয়েছিল। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪৭৬ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানি হয়। এরপরের ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ হাজার ৬৯৯ টন ইলিশ রপ্তানি হয়। অন্যদিকে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ হাজার ২৩০ টন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ হাজার ৩৯১ টন ইলিশ রপ্তানি করা হয়। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৮০২ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানি করা হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গেল কয়েক বছরে যে পরিমাণ রপ্তানির অনুমোদন হয়েছে, সে অনুযায়ী রপ্তানি হয়নি।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, গেল কয়েক বছর যে পরিমাণ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, সেই পরিমাণ রপ্তানি হয়নি। গত ৫ বছরে ভারতে সাড়ে ৫ হাজার টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। তবে আমদানির অনুমতি এর চেয়ে অনেক বেশি ছিল। তিনি আরও বলেন, এবার ৩ হাজার টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হলেও শেষে দেখা যাবে দেড় হাজার টন বা তার কাছাকাছি রপ্তানি হবে। সময় স্বল্পতাসহ নানা কারণে প্রতি বছরই অনুমোদনের তুলনায় রপ্তানি কম হয়।
গত ৫ বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও দুর্গাপূজায় বাংলাদেশ থেকে ইলিশ চেয়েছিল ভারত। কলকাতার ভারতীয় মাছ আমদানিকারকদের সংগঠন ফিশ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (এফআইএ) থেকে গত ৯ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের কাছে দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ থেকে ইলিশ রপ্তানির অনুমোদনের বিষয়টি বিবেচনার অনুরোধ জানানো হয়।
ভারতীয় ব্যবসায়ীদের চিঠিতে বলা হয়, পাঁচ বছর ধরে কেবল দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে বিশেষ বিবেচনায় বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইলিশ রপ্তানি হয়। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ থেকে এবারও ইলিশ আমদানির সুযোগ চান ভারতের ব্যবসায়ীরা। তবে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের এক বক্তব্য ঘিরে ভারতে ইলিশ রপ্তানি নিয়ে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা ছিল। গত ১১ আগস্ট সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ফরিদা আখতার বলেন, দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে তারপর ইলিশ বিদেশে রপ্তানি করা হবে। ইলিশের দাম কমবে বলেও মন্তব্য করেন উপদেষ্টা।
দেড় মাসের মাথায় রপ্তানি না করার সেই অবস্থান থেকে সরে এসে নরম হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে ভারতে ইলিশ মাছ রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি-২ শাখার উপসচিব সুলতানা আক্তার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে বিভিন্ন রপ্তানিকারকের আবেদনের ভিত্তিতে নির্ধারিত শর্তাবলি পালন সাপেক্ষে ৩ হাজার টন ইলিশ মাছ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হলো।
আগামী মঙ্গলবার দুপুর ১২টার মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব রপ্তানি-২ কক্ষ নম্বর ১২৭–এ আবেদন করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এরপর আবেদন করা হলে তা গ্রহণ করা হবে না। যারা আগে আবেদন করেছেন, তাদের নতুন করে আবেদনের দরকার নেই বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বিবিসির তথ্যমতে, বাংলাদেশের মোট মাছ উৎপাদনের প্রায় ১২ শতাংশই ইলিশ। দেশের জিডিপিতে এটি প্রায় ১ শতাংশ অবদান রাখে। বাংলাদেশের জেলেরা বছরে ছয় লাখ টন ইলিশ ধরেন এবং এই মাছের বেশির ভাগটাই আসে সমুদ্র থেকে।
ভারতের বিশেষ অনুরোধে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি
দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে ভারতের বিশেষ অনুরোধে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয় স্বাধীনভাবে এটা (রপ্তানির অনুমোদন) দিয়েছেন। তারা একটা অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে দিয়েছেন। ভারতের দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে বিশেষ অনুরোধ ছিল। সে অনুযায়ী তারা করেছেন। সেটা তাদেরকে তো আমি জোর করতে পারি না।’
উপদেষ্টা বলেন, গতকাল যেটা করেছে সেটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে। অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দিয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। আমাদের এখনও সেই কমিটমেন্টটা আগের মতোই আছে, আমরা বাংলাদেশের মানুষের জন্য ইলিশের যেন প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে পারি।
রপ্তানি বা আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আছে বলেও মন্তব্য করেন ফরিদা আখতার। বৃহত্তর স্বার্থে ভারতে ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ৩ হাজার টন রপ্তানির কথা বলা হয়েছে। ৫ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ হয়। এটা চাঁদপুর হাটের একদিনেরও কম। উপদেষ্টা বলেন, একটা দেশের ইমোশনাল ইনভলভমেন্ট। আমাদের ফ্রেন্ডলি কান্ট্রি আমরা বলি। প্রতিবেশী দেশ। ৩ হাজার টন, তার মধ্যে ৩ হাজার টনও যাবে না। কারণ যারা বাইরে বিক্রি করবে, রপ্তানি করবে তারা দেখবে ১ হাজার ২০০ টাকার ইলিশ ওখানে ৫ ডলার দেবে না, এটা জানা কথা।
দায়িত্বশীল মহল থেকে অনেক কিছু বলা হয়েছে। ইলিশ পাঠানো হবে না, এমনটাও বলা হয়েছে। এ প্রশ্ন করলে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দায়িত্বশীল মহল থেকে একজন বলেছেন, আরও বড় দায়িত্বশীল মহল বলেছে পাঠানো যেতে পারে। মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, গেল এক দশকে ইলিশ উৎপাদনের হার ছিল আকর্ষণীয়। বিশেষ করে ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে প্রতি বছর ইলিশের উৎপাদন হয়েছে পাঁচ লাখ টনের বেশি।
সরকারের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ইলিশ উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ১৭ হাজার টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫ লাখ ৫০ হাজার টন, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫ লাখ ৬৫ হাজার টন, ২০২১-২২ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ৬৭ হাজার টন ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ইলিশ উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ৭১ হাজার টন। অর্থাৎ শেষ পাঁচ বছরে গড়ে ইলিশের উৎপাদন হয়েছে আড়াই শতাংশের বেশি।
দৈনিক পুনরুত্থান / নিজস্ব প্রতিবেদক
আপনার মতামত লিখুন: