• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১

Advertise your products here

  1. জাতীয়

তরুণ প্রজন্মের ঐতিহাসিক আন্দোলনে যেভাবে পতন শেখ হাসিনার


দৈনিক পুনরুত্থান ; প্রকাশিত: বুধবার, ০৭ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ০৫:০৪ পিএম
তরুণ প্রজন্মের ঐতিহাসিক আন্দোলনে যেভাবে পতন শেখ হাসিনার

জুলাই মাসে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বাংলাদেশে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। এই আন্দোলন দমনে সরকারের মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের কারণে দেশব্যাপী অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলের সবচেয়ে কঠিন এই সময়ে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে প্রায় ৩০০ মানুষ নিহত হন। 

২১ জুলাই কোটা নিয়ে আপিল বিভাগের শুনানি শেষে কোটা পুনর্বহাল নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করা হয়। কিন্তু আন্দোলন দমনে পুলিশের ভূমিকা এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলের সাথে সম্পৃক্তদের দ্বারা বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে একটি গণআন্দোলনকে উস্কে দেয়। ৪ আগস্ট পুলিশের অভিযানে প্রায় ১০০ জন নিহত হয়, যার ফলে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

এর একদিন পরে হাসিনা তার ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে পদত্যাগ করতে এবং দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। শেখ হাসিনার প্রতি মানুষের ক্ষোভ এতটাই তীব্র ছিল যে তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার অগ্রদূত শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষ্কর্যগুলো পর্যন্ত ভাঙচুর করেন। বাংলাদেশের ঐতিহাসিক এই আন্দোলনের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে একটি প্রতিবেদন করেছে আলজাজিরা। জুন থেকে আগস্টে শেখ হাসিনার পতন পর্যন্ত ঘটনাগুলো উঠে এসেছে এই প্রতিবেদনে। 

জুন ৫ 
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ কোটা পদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এ রায়ের পর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রাথমিকভাবে শুরু হয় আন্দোলন। 

জুলাই ১ 
চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। 

জুলাই ১৫-২০ 
রাজধানীতে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলার পর জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে বিক্ষোভ সহিংস রূপ নেয়। 

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ করে দেয় এবং ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়। ১০ থেকে ২০ জুলাইয়ের মধ্যে সহিংসতা এবং সরকারি দমন-পীড়নে কমপক্ষে ১৮৭ জন নিহত এবং ১ হাজার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

জুলাই ১৭ 
১৭ জুলাইয়ের এই ভিডিওটি সানাদ নিউজ এজেন্সি থেকে ভেরিফাই করেছে আলজাজিরা। ভিডিওতে দৃশ্যমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানো হচ্ছে।  

জুলাই ১৮ 
সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান নেটব্লকস জানায়— কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়। 

সানাদ নিউজ এজেন্সি দ্বারা যাচাইকৃত ১৮ জুলাইয়ের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ছাদ থেকে আটকে পড়া পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করছে র‌্যাবের একটি হেলিকপ্টার। সংঘর্ষের পর শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে রাখলে ওই পুলিশরা তিন ঘণ্টা সেখানে আটকা ছিলেন। 

জুলাই ১৯— দেশব্যাপী কারফিউ 
সশস্ত্র বাহিনী বিক্ষোভকারীদের বিশাল ভিড়ের উপর গুলি চালানো রেকর্ড করা হয়েছিল, যারা পিছু হটতে অস্বীকার করেছিল। গাড়িটিকে পিছনের দিকে নিয়ে যেতেই তাদের পাথর দিয়ে আঘাত করতে দেখা যায়। 

প্রবাসী সাংবাদিক জুলকারনাইন এক্স-এ একটি ভিডিও পোস্ট করেন যেখানে দেখা যায় পুলিশ একটি এপিসি থেকে এক ছাত্রদের মরদেহ বের করে রাস্তার ওপর ফেলে চলে যায়। 

জুলাই ২১ 
সুপ্রিম কোর্ট অধিকাংশ কোটা বাতিল করে। ৩০ শতাংশ কোটা কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয় এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা ১ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গ কোটা ১ শতাংশ নির্ধারণের আদেশ দেন আদালত। 

২ শতাংশ জাতিগত সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিত করা হয়েছে, বাকি 93 শতাংশ চাকরি বাকি সব বাংলাদেশিদের জন্য মেধার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।  

দেশব্যাপী কারফিউ বহাল থাকে, সামরিক বাহিনী রাস্তায় অবস্থান করে। 

জুলাই ২৩ 
ইন্টারনেট সংযোগ আংশিকভাবে ফিরে আসে। এক্স-এ পোস্ট করা একটি ভিডিওতে দেখা যায় আহত একজন আন্দোলকারীকে উদ্ধারে আসা নিরস্ত্র আরেকজনকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছে পুলিশ। সাধারণ পোশাকে থাকা এক পুলিশ সদস্যকে পয়েন্ট-ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে গুলি করতে দেখা যায়। ছাত্র নেতারা ঘোষণা দেন তারা ২৪ জুলাই পর্যন্ত বিক্ষোভ স্থগিত করবেন। যে সময়সীমা পরে বাড়ানো হয়। 

জুলাই ২৫ 
বিক্ষোভকারীরা তাদের দাবিগুলো নতুন করে পেশ করে, যার মধ্যে ছিল ছাত্রনেতাদের মুক্তি, কারফিউ প্রত্যাহার এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আবারও চালু করা। 

তারা এ কথা মেনে নেয় যে, সুপ্রিম কোর্টের আদেশে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের তাদের যে প্রাথমিক দাবি ছিল তা পূরণ হয়েছে, কিন্তু ১৫ জনেরও বেশি বিক্ষোভকারীকে হত্যা এবং প্রায় ২ হাজার ৭শ জনকে গ্রেপ্তার করা গ্রহণযোগ্য নয়। 

জুলাই ২৯ 
বিক্ষোভ আবার শুরু হয় এবং শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়।

 এক্সে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে দেখা যায় চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ একটি সমাবেশে বিস্ফোণের পর সবাই বাঁচতে ছোটাছুটি শুরু করে। 

আগস্ট ২ 

আগস্ট ৪ 
হাজারো বাংলাদেশি বিক্ষোভকারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে গণবিক্ষোভের জন্য জড়ো হয়।  

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় একদিকে সেনাবাহিনী যখন মাঠে করছিল, তখন প্রাক্তন কিছু সামরিক কর্মকর্তা ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেন। 

১৩ জন পুলিশ কর্মকর্তাসহ প্রায় ১০০ জন নিহত হন এবং আরও বেশ কজন আহত হন। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় এসব প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। 

আগস্ট ৫ 
বিক্ষোভকারীরা গণসংহতির আহ্বান জানালে রাজধানীতে উত্তেজনা বেড়ে যায়। 

ঘটনা বিস্ময়করভাবে মোড় নেয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। 

দৈনিক পুনরুত্থান / নিজস্ব প্রতিবেদক

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন