ডিপজলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র রুখে দিতে ঐক্যবদ্ধ চলচ্চিত্রবাসী
চলচ্চিত্রের মুভিলর্ডখ্যাত এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন ডিপজলকে নিয়ে একটি শ্রেণী ষড়যন্ত্র ও কুৎসা রটাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। সম্প্রতি তাকে নিয়ে তার প্রতিপক্ষ একটি শ্রেণী তার এলাকায় মিছিল করে বিভিন্ন ধরনের শ্লোগান দেয়। এর প্রতিবাদে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি তীব্র প্রতিবাদ করেছে।
শিল্পী সমিতি এক প্রতিবাদলিপিতে বলেছে, মানবতার ফেরিওয়ালা, জনদরদী, চলচ্চিত্র পরিচালক, অভিনেতা মুভিলর্ড মনোয়ার হোসেনে ডিপজলকে নিয়ে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির এক নেতা বলেন, ডিপজল সাহেব আমাদের চলচ্চিত্রের জন্য আশীর্বাদ। চলচ্চিত্রে তার ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই একের পর এক সিনেমা প্রযোজনা করে চলচ্চিত্রে অবদান রেখে চলেছেন।
২০০৬ সালের দিকে চলচ্চিত্র যখন চরম অশ্লীলতায় নিমজ্জিত, তখন তিনি এফ আই মানিককে দিয়ে ‘কোটি টাকার কাবিন’, ‘চাচ্চু’, ‘মায়ের হাতে বেহেশতের চাবি’সহ পরপর ছয়-সাতটি সিনেমা নির্মাণ ও মুক্তি দিয়ে চলচ্চিত্রের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন। চলচ্চিত্রকে অশ্লীলতামুক্ত করে সুস্থ ধারায় নিয়ে আসেন। শুধু তাই নয়, কোটি টাকার কাবিনের মাধ্যমেই শাকিব খান ও অপু বিশ্বাসকে চলচ্চিত্রে প্রতিষ্ঠিত করেন। আরও অনেক নায়ক-নায়িকা যারা এখনো কাজ করছেন, তাদেরকে তিনি চলচ্চিত্রে সুযোগ দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। চলচ্চিত্র থেকে তিনি কিছু নেননি, বরং দিয়েছেন। তার এই অবদানকে খাটো করার জন্য পরিবর্তীত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে একটি স্বার্থান্বেষী মহল তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও কুৎসা রটাতে উঠেপড়ে লেগেছে। আমরা এই ষড়যন্ত্রের তীব্র প্রতিবাদ করছি।
শিল্পী সমিতির আরেক নেতা বলেন, ডিপজল আমাদের সদস্যদের পাশে সারাবছর সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে যেভাবে দাঁড়ান, তা অন্য কাউকে করতে দেখা যায় না। তার কাছে গিয়ে কেউ খালি হাতে ফিরে আসে না। শুধু চলচ্চিত্রে নয়, তার এলাকার অসহায় মানুষের পাশে তিনি সবসময়ই দাঁড়ান। এসব কথা কখনো তিনি নিজে বলেন না। নীরবে মানুষের পাশে দাঁড়ান। আমরা জানি। হ্যাঁ, বিগত স্বৈরাচার সরকারের আমলে গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে তার এলাকার আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা করতে দেখা গেছে। আমরা জানি, তিনি স্বেচ্ছায় এ প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেননি। তাকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও পুলিশ প্রশাসনের প্রভাবশালী কর্মকর্তারা তাকে নানা হুমকি ও চাপ দিয়ে প্রচারনায় নামায়। সে সময়ের পরিস্থিতি কি ছিল, তা সবারই জানা।
ডিপজল সাহেব যেহেতু ব্যবসা-বাণিজ্য করেন, সেসময় নির্বাচনী প্রচারণায় না গেলে সেগুলো বন্ধ করে দেয়ারও হুমকি দেয়া হয়েছিল। ফলে বাধ্য হয়ে তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়েছিলেন। তিনি একসময় বিএনপির রাজনীতি করলেও বহু বছর আগেই রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। রাজনীতি করবেন না বলে ঘোষণাও দেন। ফলে তাকে কখনো রাজনীতিতে দেখা যায়নি।
স্বৈরাচার সরকারের বিগত সাড়ে ১৫ বছরে কখনো তাকে কোনো মিছিল-মিটিংয়ে দেখা যায়নি। মিরপুর এলাকায় দলমত নির্বিশেষে ডিপজলের বিপুল জনপ্রিয়তা রয়েছে। ফলে গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে পতিত স্বৈরাচার সরকারের প্রার্থী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগানোর জন্য চাপ দিয়ে নির্বাচনী প্রচারনায় নামতে বাধ্য করে। স্বৈরাচারের পতনের পর এখন তার প্রতিপক্ষ তার বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে। আমরা শিল্পী সমিতি তার পাশে আছি এবং থাকব। চলচ্চিত্রে ডিপজল সাহেবের যে অবদান, সে অবদান মুছে দিতে দেব না। তার বিরুদ্ধে যেকোনো ষড়যন্ত্র আমরা নস্যাত করে দিতে প্রস্তুত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির একজন প্রভাবশালী নেতা বলেন, চলচ্চিত্রে ডিপজল সাহেবের যে অবদান, তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
চলচ্চিত্রের প্রতি এমন নিবেদিতপ্রাণ আর কাউকে দেখা যায় না। তিনি সবসময়ই বলেছেন, আমৃত্যু চলচ্চিত্রের সাথে থাকবেন। তার রক্তে চলচ্চিত্র মিশে আছে। চলচ্চিত্রের মন্দাবস্থায়ও তিনি বিনিয়োগ করে একের পর এক সিনেমা নির্মাণ করেছেন। এর মাধ্যমে বেকার পরিচালক, শিল্পী ও কলাকুশলীদের কর্মসংস্থান করেছেন। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি তিনি একজন জনদরদী ও সমাজসেবক। কত মানুষের বিপদের সময় যে তিনি পাশে দাঁড়িয়েছেন, তার হিসাব নেই। ছাত্র-জনতার আন্দোলনেও শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
দুই ছেলেকে আন্দোলনে পাঠিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর হিন্দুদের মন্দির রক্ষায় লোকজন দিয়ে পাহারা দিয়েছেন। এখন একটি কুচক্রি মহল তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে নেমেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং চলচ্চিত্রবাসী তার পাশে ছিল, থাকবে এবং আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র রুখে দেবে।
দৈনিক পুনরুত্থান / নিজস্ব প্রতিবেদক
আপনার মতামত লিখুন: