পাথরঘাটায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের যোগসাজশে জমি দখল

বরগুনার পাথরঘাটায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জমি অবৈধভাবে দখল করে স্থায়ী স্থাপনাসহ বিভিন্ন রকমের ঘর নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাথরঘাটা কাঁঠালতলী ইউনিয়নের তালুকের চরদুয়ানি টাকার খাল ব্রিজের দুই পাশে এবং কাঠালতলী ইউনিয়নের পাথরঘাটা বিশখালী নদী ও বলেশ্বর নদীর বাড়ানি খালের দুই তীরের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তিতে অবৈধ স্থাপনার গড়ে উঠেছে।


স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় এসব দখল হচ্ছে অভিযোগ স্থানীয়দের। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান,পানি উন্নয়ন বোর্ড পাথরঘাটা অফিসকে বারবার জানানো হলেও তারা কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না বলেও জানা গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) লোকজনকে টাকা দিয়েই প্রভাবশালীরা ঘর তুলছেন এবং এ জমি দখল প্রতিটি ঘরের জন্য তিন থেকে সাত দশ লক্ষ টাকা পর্যন্ত স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তুলে পাথরঘাটা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কে ম্যানেজ করে রাতের আঁধারে অসাদু ব্যবসায়ীরা জমি দখলে লিপ্ত থাকে। পানি উন্নয়ন বোর্ড পাথরঘাটা অফিসের কার্যসহকারী মামুন মিয়া দাড়িয়ে থেকে দখল করে দিবেন বলেও জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে । এ খালেরর মধ্য দিয়ে পাথরঘাটা টু খুলনা পাইকারি বাজারের মালামাল বহনকারী জাহাজ চলাফেরা করে খালের দুই পাড়ে অবৈধভাবে দখল হওয়ায় দিন দিন খালের নব্যতা হারাচ্ছে। এর দুই পাশে কোটি কোটি টাকা সম্পত্তি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) এর জমিতে একাধিক স্থায়ী ও অস্থায়ী স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এরমধ্যে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। চরদুয়ানি বাজার ও কাঁঠালতলী মধ্যে খালের দুই পাশে জমি দখলের বিষয়ে একটি মামলা হয় ।
মামলার শেষ পর্যায়ে উচ্ছেদ আদেশ হয়। উক্ত উচ্ছেদকে বিলম্ব করতে অসাদু ব্যবসায়ীরা মহামান্য হাইকোর্টের মাধ্যমে তিন মাস করে দুইবার স্থগিতাদেশ রায় আনেন। কিন্তু এই রায় এক বছর পার হয়ে গেল প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করছে। এদিকে ধীরে ধীরে বাড়ানি খালের নব্যতা হারাচ্ছে। সরেজমিন থেকে আরো জানা যায়, এখানে যারা অবৈধভাবে জমি দখল করে আছেন এদের কারোই দালিলিক কোনো কাগজপত্র না থাকলেও তাদের দাপট রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা লিটন মিয়া জানান অবৈধ স্থাপনা নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ড পাথরঘাটা অফিসের কর্মকর্তাগন জড়িত।
আমরা যারা সাধারন বাসিন্দারা রয়েছি , তাদের কাছে বারবার গেলেও তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না। স্থানীয় বাসিন্দা জাহিদুর রহমান জানান , গত আওয়ামী সরকারের আমলে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জমি দখল করে এক একটি বিডি তিন লক্ষ টাকা থেকে ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন। তৎকালীন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শহিদুর রহমানের নেতৃত্বে সবচেয়ে বেশি অবৈধভাবে জমি দখল করে দোকান নির্মাণ করা হয়। তিনি মোটা অংকের টাকা নেওয়ার পরও তাকে ব্যক্তিগতভাবে একটি স্টল দেওয়া হয় সেই স্টলটি ৭ লক্ষ টাকা বিক্রি করে দেন।
আদালত থেকে উচ্ছেদের রায় আসার পরে কিছুদিন ঘর নির্মাণ বন্ধ ছিল। মহামান্য হাইকোর্ট থেকে স্থগিতাদেশ রায় হওয়ার পর আবার সক্রিয় হয় অসাধু ব্যবসায়ীরা। মোটা অংকের টাকা লেনদেনের কারণে মাঝপথেই ঘর নির্মান করছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু অসাধু কর্মচারীদের যোগসাজসে দিন দিন স্থানীয় প্রভাবশালীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি অবৈধভাবে দখল করে ফাউন্ডেশন করে ছাদ দিয়ে ভবন ও দোকানপাট গড়ে তুলছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা এমাদুল হোসেন জানান, এভাবে দখল করলে একপর্যায়ে সরকারের সব সম্পত্তি ভোগ দখলে চলে যাবে অসাধু ব্যক্তিদের হাতে। স্থানীয় অবৈধ ঘর নির্মাণকারী মোঃ শাজাহান সাংবাদিকদের জানান, আপনারা যদি রিপোর্ট করেন তাহলে আমাদের টিকে থাকা মুশকিল হয়ে যাবে, আমরা যে টাকা পয়সা দিয়ে জমি দখল করেছি এই অর্থ সম্পূর্ণভাবে গচ্ছা যাবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কে যে টাকা আমরা দিয়েছি তা আদায় করতে পারবো না।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাথরঘাটা) অফিস সহকারী মামুনের সাথে বারবার যোগাযোগ করা হলো তিনি বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এদিকে জমি দখল করে ঘর নির্মাণকারী বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হোসেন (ইউপির সদস্য) কাঠালতলী। তিনি বলেন এখানে নিজেরও একখানা ঘর রয়েছে সবার যা হবে তাই আমারও তা হবে। অভিযোগ প্রসঙ্গে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের পাথরঘাটা কার্যালয়ের কার্যসহকারী মো. মামুন মিয়া বলেন, ১৫ লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। ওই বাজারের দুইটি পক্ষ থাকায় একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে।


বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শওকত হোসেন মেহেরাজ বলেন, আমাদের জনবল না থাকায় ওইভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। চরদুয়ানি বাড়ানি খালের হাইকোর্টের রায়ের কারণে উচ্ছেদ অভিযান আটকে আছে । পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জমি দখলের বিষয়টিতে আমরা ব্যবস্থা নিব।
দৈনিক পুনরুত্থান /
- বিষয়:
- পাথরঘাটা
- পানি উন্নয়ন বোর্ড
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

আপনার মতামত লিখুন: