মুখোশের আড়ালে প্রথম আলো ডেইলি স্টারের আসল চেহারা!
.jpg.webp)
প্রথম আলো, ডেইলি স্টার হলো দেশবিরোধী, গণতন্ত্রবিরোধী। যারা সবসময় দেশে বিরাজনীতিকরণের পক্ষে। যখনই তারা সুযোগ পায় তখনই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। সাম্প্রতিক সময়ে ডেইলি স্টারের ভূমিকা তার প্রমাণ।


উল্লেখ্য যে, ওয়াশিংটনে গত শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে একজন ভারতীয় সাংবাদিক প্রশ্ন করেন। এই প্রশ্নের উত্তরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট যা বললেন তা সম্পূর্ণ বিকৃত করে প্রকাশ করল দেশের ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার। অনেকের ধারণা ভারতকে খুশি করতেই ডেইলি স্টার ইচ্ছা করে এটা করেছে।
ট্রাম্পের কাছে ভারতীয় ওই সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন যে, বাইডেন প্রশাসনের সময় বাংলাদেশে রেজিম চেঞ্জ (হাসিনার পতন) ইস্যুতে আমেরিকার ডিপ স্টেটের ভূমিকা ছিল।
এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী? উত্তরে ট্রাম্প বলেছে- না, আমেরিকার ডিপ স্টেটের কোনোই ভূমিকা ছিল না। একই সঙ্গে মোদির দিকে ইঙ্গিত করে ট্রাম্প বলেছেন, বাংলাদেশ ইস্যুতে ওই প্রশ্নের উত্তরটা মোদির ওপর ছেড়ে দিলাম! অর্থাৎ বাংলাদেশসংক্রান্ত ওই প্রশ্নটার উত্তর মোদিকে দিতে বলেছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু ডেইলি স্টার বাংলা ভার্সনের অনলাইনে শিরোনাম করা হয়- ‘বাংলাদেশের বিষয়গুলো মোদির হাতে ছেড়ে দিচ্ছি : ট্রাম্প’। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হলে বাধ্য হয়ে ভুল স্বীকার করে ডেইলি স্টার।
প্রথম আলো, ডেইলি স্টারের বিকৃত মিথ্যাচার এটিই প্রথম না। তারা সবসময় বাংলাদেশে বিরাজনীতিকরণ এবং মিথ্যাচারের রাজনীতিকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। বিভিন্ন সময় তারা বিএনপি, বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে নানা রকম অসত্য ভিত্তিহীন মনগড়া সংবাদ প্রকাশ করেছে। ২০০৭ সালের ১১ জুন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান স্বনামে একটি সম্পাদকীয় লিখেছিলেন, ‘দুই নেত্রীকে সরে দাঁড়াতে হবে’ শিরোনামে সম্পাদকীয়টি প্রথম আলোর প্রথম পাতায় প্রকাশিত হয়। সেই প্রতিবেদনে মতিউর রহমান লেখেন- ‘২০০১ সালে পুনরায় বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসে।
কিন্তু চরিত্রের কোনো বদল হয়নি। বরং বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের নেতৃত্বের অর্থ-সম্পদ-বিত্তের আকাঙ্ক্ষা আরো উদগ্র রূপ নেয়। শুরুতেই বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকার আওয়ামী লিগের নেতা-সমর্থক ও সংখ্যালঘুদের ওপর ব্যাপক হামলা চালায়। দুর্নীতি লাগামহীন হয়ে পড়ে। প্রশাসনে নির্লজ্জ দলীয়করণ করা হয়। নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্মকমিশন, বিচারবিভাগসহ কোনো কিছুই চরম দলীয়করণ থেকে রক্ষা পায়নি। সারা দেশে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজির বন্যা বয়ে যায়। খালেদা জিয়া ও নেতারা দেশব্যাপী নৈরাজ্য, চাঁদাবাজি, লুট, জমি দখল ও দেশি-বিদেশি সূত্রে শত সহস্র কোটি টাকা সংগ্রহ অভিযানে নেমে পড়েন। সেই সঙ্গে যুক্ত হয় ধর্মীয় জঙ্গিবাদ, দেশব্যাপী বোমা-গ্রেনেড হামলা প্রভৃতি।


এগুলোর পেছনে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা আমরা দেখতে পাই। বিরোধীদলীয় নেত্রীর জনসভায় গ্রেনেড হামলায় ২২ নেতা-কর্মীর মৃত্যু ও তিন শতাধিক লোকের আহত হওয়া, সাবেক অর্থমন্ত্রীর শাহ এ এম এস কিবরিয়াসহ অনেক বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীকে হত্যার ঘটনায় আমরা তদন্ত আর বিচারের নামে প্রহসন দেখতে পেয়ছি। সন্ত্রাস-দুর্নীতির সঙ্গে মন্ত্রী-সাংসদসহ দলের সর্বোচ্চ পর্যায়কে সরাসরি জড়িত হতে দেখা যায়। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও ব্যবহৃত হয়। বেগম খালেদা জিয়ার দুই সন্তান তারেক ও আরাফাত, দুই ভাই সাইদ এস্কান্দার ও শামীম এস্কান্দার এবং অন্যান্য আত্মীয়রা ব্যাপকভাবে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হন। তাঁর ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তা দুই রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী ও মোসাদ্দেক আলী ফালুর নগ্ন দুর্নীতি এখন সর্বত্র আলোচিত। তাদের দুর্নীতি আর দখলের যেসব কাহিনী প্রকাশিত হয়েছে, তা একসময় অবিশ্বাস্য মনে হলেও সেসব এখন সত্য বলে সবাই মানছেন। বাংলাদেশের মন্ত্রী-সাংসদের ব্যাপক দুর্নীতি আফ্রিকার বিভিন্ন স্বৈরশাসকদের দুর্নীতির কাহিনিকেও হার মানিয়েছে। এসব দুর্নীতির নানা খবর এখনো প্রকাশিত হয়ে চলেছে...।’
তিনি আরো লিখেছেন, ‘আমরা দেখতে পাই, পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষে যেকোনো উপায়ে আবার ক্ষমতায় আসার জন্য বিএনপি কেমন মরিয়া হয়ে উঠেছিল। নির্বাচন কমিশনে নিজেদের লোক বসিয়ে এবং ভুলে ভরা ভোটার তালিকা করে পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে আসতে চেয়েছিল। একদিকে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য চারদলীয় জোটের নানা রকম চক্রান্তমূলক পদক্ষেপ, অন্যদিকে তা প্রতিহত করার জন্য আওয়ামী লীগসহ বিরোধী দলগুলোর সর্বাত্মক প্রতিরোধ ক্রমেই সহিংস রূপ নিতে থাকে। ঢাকার রাজপথে রক্তাক্ত সংঘর্ষ হয়। (আওয়ামী লীগ দাবি করে ৬৭ জনের প্রাণের বিনিময়ে বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এসেছে)। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, মানুষের জীবনযাত্রা পর্যন্ত অচল হয়ে পড়ে। দুই নেত্রীর অনমনীয় মনোভাব ও প্রতিহিংসাপরায়ণতা দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচিত হতে থাকে। এ রকম অনিশ্চিত প্রেক্ষাপটে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয় এবং সেনাবাহিনীর সমর্থনে বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসে...।’
অর্থাৎ প্রথম আলো, ডেইলি স্টার যে কখনোই গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি নয় এবং বাংলাদেশের পক্ষে নয় সেটা তারা বারবার প্রমাণ করেছে। এখন তারা (প্রথম আলো, ডেইলি স্টার) জুলাই বিপ্লবের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন এবং বিএনপির প্রতি সহানুভূতি দেখিয়ে তাদের মিত্র সাজলেও সুযোগ পেলে তারা আবার তাদের আসল চেহারা দেখাবে।
দৈনিক পুনরুত্থান /
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

আপনার মতামত লিখুন: