• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১

Advertise your products here

  1. জাতীয়

আমতলীতে খরস্রোতা খাল যেন সবুজের ক্ষেত! পানির সংকটে লক্ষাধিক মানুষ


দৈনিক পুনরুত্থান ; প্রকাশিত: রবিবার, ১২ জানুয়ারী, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ০৯:১৪ পিএম
আমতলীতে খরস্রোতা খাল যেন সবুজের ক্ষেত! পানির সংকটে লক্ষাধিক মানুষ

বছরের পর বছর  জমে আছে কচুরিপানা। দেখে বোঝার উপায় নেই এটি খাল নাকি একটি সবুব ফসলের ক্ষেত , এক সময়  খরস্রোতা খালটির পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক ছিলো। তখন এই খাল দিয়ে ট্রলার ছোট ছোট নৌযান ও নৌকা চলাচল করতো। গ্রামের লোকজন এই এই নৌযানে করে চলাচল ও  মালামাল  পরিবহন করতো। 

বর্তমানে দুই দশক ধরে কচুরিপানায় তা বন্ধ হয়ে নানা ধরনের ভোগান্তির  শিকার হচ্ছেন দুই পাড়ে বসবাসরত বাসিন্দারা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আমতলী উপজেলার সুবন্ধি খালের কচুরিপানা অপসারণ করতে ২০২১ সালে একটি প্রকল্প হাতে নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে হাতে নেওয়া ওই প্রকল্পটিতে পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তি থাকায় তা আর বাস্তবায়ন করা হয়নি। ফলে দিনদিন ওই খালটিতে কচুরিপানার পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোগান্তির চরমে পৌঁছেছে খালটির দুই পাড়ের ৪টি  ইউনিয়নের বাসিন্দাদের।

বরগুনার আমতলী উপজেলার চাওড়া ও হলদিয়া, আমতলী সদর, কুকুয়া  এ ৪টি ইউনিয়নের মধ্যে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের  সুবন্ধি নামক খালটির দুই পাড়ে অন্তত ৩০টি গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক  মানুষ বসবাস করেন। এসব বাসিন্দাদের পানির চাহিদা পূরণে খালটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকলেও কচুরিপানার কারণে তা বন্ধ হয়ে গেছে। পানি দূষিত হওয়ার ফলে বিভিন্ন গবাদিপশুর গোসল করানোসহ দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করা যাচ্ছে না এ খালটির পানি। এ ছাড়াও আটকে থাকা কচুরিপানায় দূষিত হওয়া পানির কারণে ডায়রিয়া এলার্জিসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে হরহামেশাই আক্রান্ত হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

মো. আফজাল মোল্লা  নামের  এক বাসিন্দা বলেন, প্রায় ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে খালের মধ্যে কচুরিপানা জমে আছে। এ খালে যারা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন তারা মাছ ধরতে পারছেন না। আবার অনেকের গরু-ছাগল আছে কিন্তু কচুরিপানার কারণে খালের পানিতে গোসল করাতেও পারছেন না। তবে যাদের টিউবওয়েল আছে তারা সে পানিতেই গোসলসহ সব কাজ করতে পারছেন। কিন্তু যাদের টিউবওয়েল নেই তাদের অনেক সময় বাধ্য হয়ে খালের দূষিত পানিই ব্যবহার করতে হয়।  এলাকাবাসীর এমন দুর্ভোগের কথা চিন্তা করেও এখন পর্যন্ত কেউ খালটির কচুরিপানা পরিষ্কারকারের কোনো ধরনের উদ্যোগ নেয়নি বলেও জানান তিনি।

একই এলাকার বাসিন্দা মো. মনির মিয়া  বলেন, কচুরিপানার কারণে খালের পানি নষ্ট হওয়ায় এলাকার কেউ এ পানি ব্যবহার করতে পারছেন না। এ ছাড়া দূষিত পানির কারণে মশা-মাছি জন্মে নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে হয় আমাদের। আমাদের দাবি এ খালে জমে থাকা কচুরিপানা দ্রুত অপসারণ করা হোক।

মো. ইমরান  নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, বছরের পর বছর আমাদের এ খালের মধ্যে কচুরিপানা জমে আছে। কেউ এর সমাধানে কাজ করেন না। নদীর দুই পাড়ে আমরা যারা বসবাস করি তারা এখন মশা-মাছির কারণে রাতে ঠিকভাবে ঘুমাতেও পারি না। এছাড়া শুকনো মৌসুমে আমাদের অনেকের পুকুরের পানি শুকিয়ে যায়। পানির প্রয়োজনে বিকল্প হিসেবে তখন খালের দূষিত পানিও ব্যবহার করতে পারি না। ফলে বাধ্য হয়ে আমাদেরকে পানির ভোগান্তিত থাকতে হয়।

এ অবস্থায় সুবন্ধি খালের কচুরিপানা অপসারণে এলাকাবাসীর দাবি ও খালটির পানির প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানিয়েছেন প্রশাসনের কাছে। 

ভুক্তভোগীরা জানান, পৌরসভার ৭ ও ৩নং ওয়ার্ডের  মাঝখানে আমতলী নতুন বাজার বাধবঘাট, থেকে শুরু করে কুকুয়ার ও হলদিয়ার মধ্যেখানে সুবান্ধি বাঁধ, হলদিয়া হাট থেকে ঘুঘুমারী তুজিরহাট থেকে রামজির বাজার খাল কচুরিপানায় ভরে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে নৌ চলাচল। বদ্ধ পানিতে মশা, মাছি আর সাপের উপদ্রপ। কচুরি পানা পচে খালের পানি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। 

এই খালের পচা পানি ব্যবহারের ফলে অনেকের শরীরে ঘাঁ হয়েছে। আমতলীর বিশ্বাস বাড়ী এলাকায় সোহেল  বলেন, খালের পানি পইচা গ্যাছে, গন্ধে মোরা বাড়ি থাকতে পারি না, ঘুমাইতে পারি না, চলতে পারি না, খালি গন্ধ আর গন্ধ। হেই আর মধ্যে আবার মশা-মাছির উৎপাত। হলদিয়ার কালীগঞ্জর জুয়েল বলেন, খালের পানি ব্যবহার করতে পারি না। পানি হাতে লাগলে হাত চুলকায়। 

আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রশাসক ডা. তেনমং  বলেন, কচুরিপানা পচা দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে ডায়েরিয়া, চর্মরোগসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই দুগর্ন্ধযুক্ত পচা পানি কোনোক্রমে ব্যবহার করা যাবে না। 

বরগুনার পানি উন্নয়ন বোর্ডের  নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব বলেন, আমতলী উপজেলার প্রায় ৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সুবন্ধি খালে জমে থাকা কচুরিপানা অপসারণের জন্য আমাদের অনুমোদিত প্রকল্প রয়েছে। এছাড়া খালটির সঙ্গে যেসব খালের সংযোগ রয়েছে সেগুলোর বর্তমানে খননকাজ চলমান রয়েছে। যাতে করে সুবন্ধি খালের পানির প্রবাহ ফিরিয়ে আনা যায়। সংযোগ খালগুলোর খনন কাজ শেষ হলেই সুবন্ধি খালে জমে থাকা কচুরিপানা অপসারণের কাজ শুরু  করা হবে।

দৈনিক পুনরুত্থান /

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন