১০০০ বছরের মধ্যে গ্রিনল্যান্ডের তাপমাত্রা সবচেয়ে উষ্ণ
বিশ্বের সামনে এখন যেসব হুমকি রয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন সেগুলোর একটি। বিশ্বে ইতোমধ্যেই এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এটি মোকাবিলায় বিশ্বজুড়ে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও এখনও খুব বেশি ফল মেলেনি। এই পরিস্থিতিতে সামনে এসেছে নতুন তথ্য। এতে বলা হয়েছে, গ্রিনল্যান্ডের তাপমাত্রা ১০০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণ হয়ে পড়েছে।
নতুন এক গবেষণায় এই তথ্য সামনে এসেছে। বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রিনল্যান্ডের তাপমাত্রা ১০০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণ হয়ে পড়ার এই খবর প্রাকৃতিক বিশ্বে মানব-সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে তুলে ধরছে। আল জাজিরা বলছে, বুধবার বৈজ্ঞানিক জার্নাল নেচারে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ২০ শতকের গড় তাপমাত্রার তুলনায় ১৯৯৫ সাল থেকে তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস (২.৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট) বেড়েছে। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, বরফের শীট এবং হিমবাহের গভীর থেকে নেওয়া নমুনাগুলোসহ গ্রিনল্যান্ডের বরফ যথেষ্ট উষ্ণ হয়েছে।
আরও পড়ুন>> আরো কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে ১৭ জেলায় মৃদু শৈত্য প্রবাহ
এই গবেষণার প্রধান লেখক ছিলেন জার্মানির আলফ্রেড ওয়েজেনার ইনস্টিটিউটের গ্লাসিওলোজিস্ট মারিয়া হোরহোল্ড। তিনি বলছেন, ‘আমরা ১৯৯০ এর দশক এবং ২০১১ সালের মধ্যে তাপমাত্রা বাড়তে দেখছি। আমাদের কাছে এখন বিশ্ব উষ্ণায়নের স্পষ্ট দৃশ্যও রয়েছে।’যেহেতু জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন নির্গমণ হয় এবং গ্রহকে আরও উষ্ণ করে, তাই বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, দেশগুলো এখনও বিশ্ব উষ্ণায়নের সবচেয়ে খারাপ প্রতিক্রিয়া এড়াতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনগুলো (বাস্তবায়ন) করতে পারেনি।গত নভেম্বরে জাতিসংঘের একটি রিপোর্টে দেখা গেছে, বিশ্ব উষ্ণ হওয়ার সাথে সাথে বিশ্বের অনেক বিখ্যাত হিমবাহ ২০৫০ সালের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে।
সংস্থাটি বিশ্বের ১৮ হাজার ৬০০টিরও বেশি হিমবাহ পর্যবেক্ষণ করে থাকে এবং চলতি শতাব্দীর মাঝামাঝি নাগাদ সেগুলোর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ অদৃশ্য হবে বা গলে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, আগামী ২১০০ সালের মধ্যে বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ হিমবাহ অদৃশ্য বা গলে যাবে বলে শঙ্কা রয়েছে। আল জাজিরা বলছে, গ্রিনল্যান্ডের বরফ কোর দীর্ঘমেয়াদী তাপমাত্রার পরিবর্তন সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করে, যেটির বিশ্লেষণ করতেও সময় লাগে। কোর থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য ১৯৯৫ সালে আপডেট করা হয়েছিল এবং পূর্বে সেটি ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, গ্রিনল্যান্ড আর্কটিক অঞ্চল বাকি অংশের মতো দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে না।
অন্যান্য খবর>> মোটরবাইক পদ্মা সেতুতে চলাচলের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টের রিট খারিজ
তবে ২০১১ সালে নেওয়া তথ্যের নতুন বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, গত ১৫ বছরে উষ্ণায়ন ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ডেনিশ মেটেরোলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের জলবায়ু বিজ্ঞানী মার্টিন স্টেন্ডেল এই গবেষণা সম্পর্কে বলছেন, এটি গুরুত্বপূর্ণ অনুসন্ধান। তিনি বলছেন, গ্রিনল্যান্ডের বরফ গলে যাওয়ার ফলে সমুদ্রে পানি বাড়ছে। এতে সমুদ্রপৃষ্টের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে।এছাড়া উত্তর গ্রিনল্যান্ডের উষ্ণতা সম্পর্কে সবার খুব উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন ডেনিশ মেটেরোলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের বরফ বিজ্ঞানী জেসন বক্স। এর আগে বিজ্ঞানীদের বরাত দিয়ে ২০২০ সালে এক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানিয়েছিল, এই শতকে ২০১২ সালে সব চেয়ে বেশি বরফ গলেছিল গ্রিনল্যান্ডে। ২০১৯ সালে সেই রেকর্ডও ভেঙে যায়।
দৈনিক পুনরুত্থান / স্টাফ রিপোর্টার
আপনার মতামত লিখুন: